বাংলাদেশী একজন সংগ্রাহক বাবুল বিশ্বাস দীর্ঘ্য ৩০ বছর যাবৎ সংগ্রহ করে আসছেন বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের পোস্টার ৷ তার পাশাপশি টিকেট,
ফটোগ্রাফ, সুভেনীড় আরো অনেক তথ্যাদি ৷ তিনি জানান সর্বমোট ডকুমেন্টের সংখ্যা হবে প্রায় ৫০ হাজার এর মতো ৷ তন্মধ্যে ৭ হাজার শুধু মাত্র
নাটকের পোস্টার ৷ তিনি অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পোস্টারগুলো সংরক্ষণ এর লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মহলে ৷ পোস্টার সংগ্রহ যতখানি সহজ,
তার সংরক্ষণ ঠিক ততখানিই কঠিন ৷ পোস্টার এর প্রদর্শন করা বা পোস্টার স্থানান্তর করা দুটোই ব্যয় বহুল এবং ছিড়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার
আশঙ্কা রয়েছে ৷ বলার অবকাশ রাখেনা কাগজের তৈরী পোস্টার বার বার দেয়ালে লাগানো বা গোল করে মোচড় দিয়ে বহন করা দুটোই পোস্টার নষ্ট
হয়ে যওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৷ আকাশ কুশুম কল্পনা হলেও বাস্তবে পরিণত হলো স্বদেশের বাহিরে প্রথম জাপানে বাংলাদেশী মঞ্চ নাটকের পোস্টার প্রদর্শনী করা ৷
১৩ই ডিসেম্বর রোববার টোকিওস্থ আকাবানে বিভিও হলে বাংলাদেশ সাংবাদিক-লেখক ফোরাম, জাপানের উদ্যোগে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ৷
প্রায় শ'খানেক অতি পুরানো পোস্টার গ্যালারীর দেয়ালে লাগানো হয় ৷ অনুষ্ঠানের ধারা ছিল একটু ভিন্ন রকমের, যেখানে নেই কোন মঞ্চ, নেই কোন
চেয়ার-টেবিল ৷ দূর দূরান্ত থেকে আগত প্রবাসীরা যে যার মতো গভীর আগ্রহের সহিত দেখছে বাংলার অতিত, বাংলার সংস্কৃতির ইতিহাস কতিপয় নাট্য
মঞ্চের পোস্টার এর মাধ্যমে ৷ পোস্টার শুধু দেখাতেই সীমাবদ্ধ ছিলনা অনেকেই তুলে নিয়েছেন অনেক ছবি ৷ আবার প্রবাসীদের মধ্যে যারা অতিতে নাট্য
জগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা উঁকি মেরে দেখছেন নিজেদের অভিনিত পোস্টারটি, তুলছেন সেই পোস্টার এর সামনে নিজের অসংখ্য ছবি, আর গল্পে
মশগুল হয়ে পড়ছেন তখনকার ঘটনা নিয়ে ৷
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টোকিওতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স ড. জীবন রঞ্জন মজুমদার। বিশেষ
অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, গবেষক ও বিশ্লেষক অধ্যাপক আলী রিয়াজ, বাংলাদেশ থেকে আগত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের
অধ্যাপক ও অভিনেতা রহমত আলী, রাধারমণের গান নিয়ে গবেষক ও গায়ক বিশ্বজিৎ রায়।
শুরুতেই ড. জীবন রঞ্জন মজুমদার উপস্থিত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ফিতা কেটে পোস্টার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ৷ হোসাইন মুনিরের সঞ্চালনায় প্রর্যায়ক্রমে
শুভেচ্ছা বক্তব্য পেশ করেন অধ্যাপক আলী রিয়াজ, রহমত আলী, বিশ্বজিৎ রায়, জাপান প্রবাসী গোলাম সাকলাইন, সুখেন ব্রহ্ম, প্রবীর বিকাশ সরকার,
অজিত বড়ুয়া, শরাফুল ইসলাম, কবি মিল্টন, হক মোহাম্মদ ইমদাদুল, নাজিম উদ্দীন, কমল বড়ুয়া, আশরাফুল ইসলাম, মুকুল মোস্তাফিজ, এম এম শাহিন,
হারুন রশিদ, মোহাম্মদ জসিম, হাসিনা মনি, সুবর্ণা নন্দী, কাজী ইনসানুল হক ও ফোরাম সভাপতি জুয়েল আহসান কামরুল প্রমূখ ৷
বাবুল বিশ্বাস এর সংগৃহীত পোস্টার বিদেশে প্রদর্শনীর আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরামের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।
তিনি জানান তার সংগৃহীত পোস্টার এর প্রদর্শনী বিদেশে এটাই প্রথম।
শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে এখন বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের ইতিহাস সংরক্ষণে একাডেমিক ও আর্কাইভাল মর্যাদা পেয়েছেন তিনি ৷ উল্লেখ্য, বাবুল বিশ্বাস শুধুমাত্র
পোস্টার সংগ্রাহকই নন, তিনি বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ওপর অনেকগুলো বইয়ের লেখক, নাট্যকার, পরিচালক, সংগঠক ও আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সমন্বয়ক।
মঞ্চ নাটকের পোস্টার প্রদর্শনীও যে, মানুষকে আনন্দ দিতে পারে তা অজানা ছিল ৷ তবে জাপান প্রবাসীরা তার স্বাদ ভোগ করতে সক্ষম হল অতি সুলভে ৷ এটা
বাবুল বিশ্বাসের একমাত্র একক প্রচেষ্টায় বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাস সংরক্ষণের ফলাফল মাত্র ৷
প্রদর্শনী শেষে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে ছুটে চলে যাওয়া হয় উমি হোতারু (সাগরের জোনাকি)-র দিকে ৷ রাত তখন প্রায় ১০টা ৷
৪৫ কিঃমিঃ পথ অতিক্রম করে যেতে হবে ৷ তার মধ্যে সমূদ্রের গহীনে যেতে হবে প্রায় ১২ কিঃমিঃ পথ পানির নীচে
সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে ৷ কতুহলী বাবুল বিশ্বাস শুনে অবাক ৷ প্রবাসে প্রথম পোস্টার প্রদর্শনীর আনন্দ আর জাপানের তৈরী উমি
হোতারু গভীর রাতের ইমেজ দিয়ে হয়তোবা বাবুল বিশ্বাস এঁকে নিলেন নিজ হৃদয়ের অন্তরায় অন্য এক ধরনের নতুন পোস্টার ৷
|