|
জাপান প্রবাসীদের প্রাণের মেলা - টোকিও বৈশাখী মেলা
|
১০ই এপ্রিল ২০১৫ইং
|
কাজী ইনসানুল হক / টোকিও, জাপান
|
শুরুটা হয়েছিল প্রায় দেড় যুগ আগে একেবারে আনকোরা আয়োজনে জাপান প্রবাসীরা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে হল ভাড়া নিয়ে
কংক্রিটের দেওয়ালের ভিতর উদযাপন করতেন ৷ শুধু টোকিও নয়, অন্যান্য বড় বড় শহর তথা - ওসাকা,
কিওতো, হিরোশিমা, নাগাসাকি, সেন্দাই এ প্রবাসীরা ছোট ছোট হল ভাড়া করে দিনটি উদযাপন করেছিলেন ৷
মূলতঃ এই আয়োজনের উদ্যোগীরা ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীগন ৷
মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাভাষীরা নিজস্ব মানচিত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন ৷ সেই চেতনা নিয়ে
প্রবাসেও তারা কিছু করতে চান - টোকিওস্থ ইকেবুকুরো রেলওয়ে ষ্টেশনের ওয়েস্ট এক্সিট সংলগ্ন একটি পার্ক 'জাপানীজ
ভাষায় যার নাম - ইকেবুকুরো নিশিগুচি কোয়েন' এ 'বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল' নাম দিয়ে পর পর দুইটি অনুষ্ঠান আয়োজনের
পর ১৯৯৯ সালে জাপান বাংলাদেশ সোসাইটি নামক একটি সংগঠন বাংলাদেশপ্রেমী জাপানী বন্ধুদের
নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে একই পার্কে শুরু করে টোকিও বৈশাখী মেলা ৷ পরবর্তীতে এই মেলার সাথে 'কারি ফেস্টিভ্যাল'
নামটিও সংযোজন করে নতুন রূপে নামকরণ করা হয় 'বৈশাখী মেলা ও কারি ফেস্টিভ্যাল' ৷
ডঃ শেখ আলীমুজ্জামান
ওৎসুবা ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় জাপান বাংলাদেশ সোসাইটি, ডঃ শেখ
আলীমুজ্জামান এর নেতৃত্বে রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন,
ক্রীড়া সংগঠন, প্রবাসী মিডিয়া ও সকল সম্প্রদায়ের সাধারন প্রবাসীদের নিয়ে
শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৫টি আয়োজন সফল করতে সক্ষম হয়েছেন ৷
আগামী ১৯শে এপ্রিল ২০১৫ তে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৬তম টোকিও 'বৈশাখী মেলা ও
কারি ফেস্টিভ্যাল ২০১৫' ৷
প্রবাসে বসেও প্রবাসী বাঙ্গালীরা মাতৃভূমির ভালোবাসায় গড়ে তুলতে চান আপন সংস্কৃতি বলয় ৷
আর তারই সফল আয়োজন টোকিও বৈশাখী মেলা ৷ সারা বিশ্বে প্রবাসীরা
বৈশাখী মেলা আয়োজন করলেও জাপান প্রবাসীরা এই মেলাকে কেন্দ্র করে
একটি অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম হয়েছেন ৷ তা হচ্ছে এই মেলার মাঠেই
তারা মহান ভাষা আন্দোলোনের প্রতিক ২১শে ফেব্রুয়ারী এবং আন্তরজাতিক মাতৃভাষা
দিবসের স্মারক 'শহীদ মিনার' প্রতিষ্ঠা করেছেন ৷ টোকিওর প্রানকেন্দ্র মর্যাদাবান
ইকেবুকুরো ন্যাশনাল থিয়েটার সংলগ্ন পার্কে এখন মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে
বাংলাদেশের 'শহীদ মিনার' ৷ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সরকারের করা এটাই প্রথম 'শহীদ
মিনার' ৷ এই বিজয়টি অর্জন করতে প্রেক্ষাপট হিসেবে নেপথ্যে ছিল বৈশাখী মেলার
প্রতি বছরের সফল আয়োজন ৷ বৈশাখী মেলা সফল ভাবে উদযাপিত হয় বলেই
জাপান কর্তৃপক্ষ 'শহীদ মিনার' নির্মানের অনুমতি দিতে কার্পণ্য করেননি ৷
জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের কেন্দ্রবিন্দু ইকেবুকুরো এলাকায় জাপানের জাতীয় ফুল ফুটন্ত চেরীর ছায়াতলে
যেন নিশ্চিন্তে বুক ফুলিয়ে গর্ভের সহিত দন্ডায়মান বাংলা ভাষার প্রতিক বহির্বিশ্বের প্রথম 'শহীদ মিনার' ৷
জাপান প্রবাসীদের প্রাণপ্রিয় এই মেলাকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা বছর ধরে
অপেক্ষায় থাকেন ৷ সারা জাপানে এখন সর্বমোট বাংলাদেশী প্রবাসীর সংখ্যা প্রায়
১২ হাজার ৷ মেলার দিন প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশী প্রবাসী, কিছু জাপানীজ এবং
কিছু ভিনদেশী প্রবাসীর সমাবেশ ঘটে ৷ দূর দূরান্ত থেকে প্রবাসীরা ছুটে আসেন এই
একটি দিনের আনন্দে শরীক হতে ৷ মেলা উপলক্ষ্যে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে আসেন
দেশবরেন্য সংগীত শিল্পীরা, লেখক-সাংবাদিক ও সম্পাদকগন ৷
হাজারো প্রবাসীর সমাগমে টোকিও বৈশাখী মেলাটি জাপানে প্রবাসীদের এযাবৎ
কালে শ্রেষ্ঠ কর্মকান্ড বলে বিবেচিত ৷ টোকিও বৈশাখী মেলা মানে বন্ধুদের
সাথে দেখা সাক্ষাৎ, দেশী খাবারের স্বাদ গ্রহন, বছর ধরে জমে থাকা ক্লান্তি অবসানের
সমাপ্তি ৷ আর বাংলাদেশের 'কারি' কে জাপানীদের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেয়ার
প্রচেষ্টাটিও কম নয় ৷
এই মেলাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে মেলা কামিটির সবাই প্রাণান্ত পরিশ্রম করেন
৷ জাপানের কঠিন আইন-কানুন রীতিনীতি মেনে চলে মেলাকে সফল করার জন্য
মেলা কমিটি অবশ্যই প্রশংসনীয় ৷
দিন দিন জাপানীদের সমাগম লক্ষ করার মতো ৷ টোকিওর বুকে এক দিনের
এক টুকরো বাংলাদেশকে দেখে জাপানীরা অবাক হয়, বাংলাদেশকে চেনে নতুন
পরিচয়ে ৷
টোকিও বৈশাখী মেলা প্রবাসীদের দেশপ্রেম আর হৃদয়ে বাংলা সংস্কৃতি লালনের আকাঙ্খা
পূর্ণ হবার একটি তাৎপর্যময় আয়োজন ৷ হৃদয়ে, মননে তাই তার অস্তিত্ব থাকে চিরঞ্জীব ৷
ই-মেইলঃ -
kaziensan@gmail.com
|
|
|
|